বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাবাজার খবর অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। journalist.hadi@gmail.com এবং newsbbazer@gmail.com এই ইমেইল দুই কপি ছবি ও দুইটি নমুনা প্রতিবেদনসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পারেন। বিভাগীয় শহরে ব্যুরো অফিস দেওয়া হবে।

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লঞ্চ মালিকরা

স্টাফ রিপোর্টার:

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দ্বার খুলবে আর মাত্র ৪ দিন পর। এই সেতু জীবনযাত্রা, অর্থনীতি আর সড়ক যোগাযোগের বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনের ফলে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছে ঢাকা-বরিশাল নৌ রুটের লঞ্চ ব্যবসায়ীরা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় লঞ্চ কোম্পানিগুলো জোর প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যাত্রী ধরে রাখতে পাল্লা দিয়ে তৈরি করছেন আধুনিক নৌযান। এগুলোয় নতুন নতুন সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করা হচ্ছে। প্রায় প্রতিটি কোম্পানির লঞ্চে চলন্ত সিঁড়ি, এটিএম বুথ, হেলিপ্যাড, সুইমিংপুল, লিফট, আইসিইউ, ডাইনিং, শিশুদের খেলার জোন, রেস্টুরেন্ট, ব্রেস্টফিডিং রুম, ইন্টারনেটসহ অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত করার কথা ভাবছেন লঞ্চ মালিকরা। সেবার মানেও আধুনিকতার ছাপ রাখার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূলত সেবার মাধ্যমে যাত্রীদের ধরে রাখার চ্যালেঞ্জই গ্রহণ করেছেন নৌযান মালিকরা। এ কারণে কীর্তনখোলা নদীর তীরে দেশীয় প্রযুক্তিতে চলছে সুন্দরবন-১৫ ও ১৬ লঞ্চের নির্মাণকাজ। ৩০০ ফুট লম্বা এবং ৫২ ফুট চওড়া লঞ্চটিতে বিভিন্ন ধরনের কেবিন ছাড়াও যাত্রীসেবায় অনেককিছুই সংযোজন করা হবে। আসন্ন কুরবানির ঈদে সুন্দরবন ১৬ লঞ্চটি যাত্রীবহনে যুক্ত হবে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের। এই বহরে নতুন করে নামছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এম খানের দুটি নতুন লঞ্চ। সেই দুটির কাজও খুব জোরেশোরে চলছে। একইভাবে মানামী ও কীর্তনখোলা লঞ্চ কোম্পানির বহরে যুক্ত হচ্ছে আরও দুটি লঞ্চ। সম্প্রতি সুরভী-৭ লঞ্চেও নতুন ডেকোরেশনে লিফট লাগানো হয়েছে। কেবিন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই আনা হচ্ছে আধুনিকতা। লঞ্চ পরিচালনায়ও আনা হয়েছে ডিজিটাল যন্ত্র। নির্মাণাধীন লঞ্চগুলোয় প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা রাখা হচ্ছে বলে জানান সুরভী লঞ্চ মালিক রেজিন উল কবির। তিনি বলেন, নৌ সেক্টরে পদ্মা সেতুর প্রভাব পড়বে। যদিও আমাদের অনেক লঞ্চ মালিকদের দাবি, লঞ্চ যাত্রীরা ভিন্ন। যারা লঞ্চে যাত্রা করার, তারা লঞ্চেই যাত্রা করবে। তেমন একটা প্রভাব পড়বে না। তবে আবার অনেকে ভিন্নটাও মনে করছে। সবদিক বিবেচনায় লঞ্চগুলো অত্যাধুনিক করতে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। শুধু তাই নয়, যাত্রীদের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে সেবার মান বাড়ানো হচ্ছে। এমনকি রাত ১০টার পর যেন লঞ্চগুলো ছাড়া যায় সে বিষয়েও কাজ করা হচ্ছে।

বরিশাল জনস্বার্থ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব মানওয়ারুল ইসলাম অলি বলেন, শুধু আধুনিকতার প্রতিযোগিতা না করে সেবার মান বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি যাত্রী ভাড়ার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। বরিশালের যাত্রীবাহী পরিবহণের চালক-মালিকরা বলছেন, আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে আর কয়েকদিন পর। পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি ও ভোলা থেকে ঢাকায় যেতে সময় কমে যাবে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা। আর যাত্রীসেবার মানও বাড়বে কয়েকগুণ।

বাংলাদেশ নৌপরিবহণ (যাত্রী পরিবহণ) সংস্থার কেন্দ্রীয় সহসভাপতি, বরিশাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, সবার আগে যাত্রীসেবার কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করছি। সারা বছর যাতে নির্বিঘ্নে লঞ্চ চলাচল করতে পারে, এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। যেন নাব্য সংকটের কারণে লঞ্চ চলাচল ব্যাহত না হয়। পাশাপাশি নৌদুর্ঘটনা এড়াতে রাডারসহ নানা অত্যাধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করছি আমরা। পদ্মা সেতু হলেও বরিশালের আরামপ্রিয় মানুষ নৌযানে যাত্রা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। তবে বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, এখন প্রতিযোগিতার মার্কেট চলছে। পদ্মা সেতু হলে এখানে অত্যাধুনিক বাস আসবে। মাত্র সাড়ে ৩-৪ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকার সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ হবে। সেক্ষেত্রে নৌ সেক্টর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। তাই যাত্রীদের ধরে রাখতে তাদের নতুন নতুন প্যাকেজ দিতে হবে। লঞ্চ মালিকদের নতুন করে ভাবতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা করবে জেলা প্রশাসন। এ ব্যাপারে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় ইতোমধ্যে পায়রা সেতু চালু হওয়ায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ফেরিবিহীন যোগাযোগ শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটার সঙ্গে ঢাকাসহ সারা দেশের ফেরিবিহীন যোগাযোগ শুরু হবে। দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে শুরু হবে নতুন অধ্যায়। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসাবাণিজ্যে প্রসার ঘটবে। তবে লঞ্চ ব্যবসায়ীরা একটু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে তারা তাদের মান উন্নয়ন ঘটালে এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে করেন বিভাগীয় কমিশনার।

Spread the love

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

© All rights reserved © 2019
Design & Developed BY আইটি হোস্ট সেবা