বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাবাজার খবর অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। journalist.hadi@gmail.com এবং newsbbazer@gmail.com এই ইমেইল দুই কপি ছবি ও দুইটি নমুনা প্রতিবেদনসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পারেন। বিভাগীয় শহরে ব্যুরো অফিস দেওয়া হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা ও উন্নয়ন আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত

উমর ফারুক আল হাদী:
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির বিষয়গুলো এখন আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত হচ্ছে। শুধু জাতিসংঘ নয়, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপান, চীন, তুরস্ক, ভারতসহ পৃথিবীর অনেক দেশই বাংলাদেশের অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় প্রশংসা করছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম আবুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে আবারও ক্ষমতায় রাখতে হবে। কারণ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং সকল প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে এ সরকারের কোন বিকল্প নেই। বিশ^বাসীর কাছেও বর্তমান সরকার অনেক প্রশংসা পেয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা ও বিশ^ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের উন্নয়নকে বিশে^র রোল মডেল হিসাবে দেখছেন। পররাষ্ট্র নীতি, সামাজিক উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক পর্যায় বিভিন্ন উন্নতশীল দেশের সাথে সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশের সরকারগুলোও বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি করেছে। বিদেশী বিনিয়োগ বেড়েছে। বেড়েছে নারীর ক্ষমতায়ন ও নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ছিল ৫৪৩ মার্কিন ডলার। বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। বর্তমানে দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৪ শূন্য শতাংশ। করোনা মহামারির আগে ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছিল ৮ দশমিক এক-পাঁচ শতাংশে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জিডিপির আকার ছিল মাত্র ৬০ বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে জিডিপি’র আকার ৪৬০ দশমিক সাত-পাঁচ বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের আকার ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি খাতে আয় হয়েছিল ১০ দশমিক পাঁচ-দুই বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ দশমিক শূন্য-আট বিলিয়ন ডলারে। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক আট-শূন্য বিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পাঠিয়েছেন ২২ দশমিক শূন্য-সাত বিলিয়ন ডলার। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে তা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। বিশ^ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ও মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৪ বিলিয়ন ডলারে, যা পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য রিজার্ভ রয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা ও ভর্তুকিতে এগিয়েছে দেশ
সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে। কমছে শিশু মৃত্যুর হার, বাড়ছে মানুষের গড় আয়ু। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বরাদ্দ ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিশুমৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজারে ৪৫ জন। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২২ জনে। গড় আয়ু সাড়ে ৬৪ বছর থেকে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৫ দমমিক ২ শতাংশ হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ছিল ৭১ শতাংশ, তা হয়েছে ৯৯ শতাংশ।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ৩৭৩ কোটি টাকা; ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি; ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষি খাতে ভর্তুকি দেওয়া হয় ৫৯২ কোটি; ২০২২-২৩ অর্থবছর কৃষি খাতে মোট ভর্তুকির পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি; ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চাল উৎপাদন হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে চাল, গম, ভুট্টা ৪ কোটি ৭২ লাখ ৮৮ হাজার মেট্রিক টন।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ২৫ হাজার ৮২৬ মেগাওয়াট। সে সময় বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর হার ছিল মাত্র ৪৫ শতাংশ। ২০২২ সালে শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশে^র ৪১তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে। জেন্ডার সমতা এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষে।
বাংলাদেশ মাছ, মাংস ও ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ইলিশ উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম। বর্তমানে বিশ্বের বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে তৃতীয়, পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়। প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান করা হয়েছে। ১ কোটি কৃষক ১০ টাকা দিয়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। ভর্তুকির টাকা সরাসরি ব্যাংকে জমা হয়। সেচের জন্য সুলভ মূল্যে বিদ্যুৎ এবং কৃষিযন্ত্র ক্রয়ে ৭০ শতাংশ ভর্তুকি পাচ্ছেন।
১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকগুলো অঞ্চলে দেশি-বিদেশি কোম্পানি বিনিয়োগ শুরু করেছে। কৃষি পণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে অনাবাদি জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন ও ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামের জনগণকে শহরের সব নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে। গ্রামেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে গেছে। এ পর্যন্ত ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়েছে। ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
গত সাড়ে ১৪ বছরে বহির্বিশে^ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়েছে। বাংলাদেশকে আজ আর কেউ বন্যা, খরা, দুর্যোগের দেশ হিসেবে দেখে না। বাংলাদেশ এখন উদীয়মান অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ দুই ডজনেরও বেশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সংগঠনে বাংলাদেশ সক্রিয় সদস্য। ২০২২ সালের অক্টোবরে পঞ্চমবারের মতো বিপুল ভোটে বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেম। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের বন্দি জীবনের অবসান হয়েছে।
ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানার শান্তিপূর্ণ মীমাংসার মাধ্যমে সরকার বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক এলাকার ওপর সার্বভৌম অধিকার অর্জন করেছে। ১২ লাখের মতো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বিশে^ মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
লক্ষ্য এবার স্মার্ট বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ এগিয়েছে অনেক। তবে আরও এগিয়ে নিতে হবে। একটি উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ অর্জন আমাদের লক্ষ্য। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পর আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য হলো স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের নানা অনুষঙ্গ ধারণ করে আমরা তরুণদের প্রশিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগ নিয়েছি। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট শিল্প কলকারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাণিজ্য, কৃষিসহ সব ক্ষেত্রে রোবোটিক্স, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, জৈব প্রযুক্তি অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। সব ক্ষেত্রে গবেষণার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ##

Spread the love

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

© All rights reserved © 2019
Design & Developed BY আইটি হোস্ট সেবা