বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৫:২০ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাবাজার খবর অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। journalist.hadi@gmail.com এবং newsbbazer@gmail.com এই ইমেইল দুই কপি ছবি ও দুইটি নমুনা প্রতিবেদনসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পারেন। বিভাগীয় শহরে ব্যুরো অফিস দেওয়া হবে।

ঈদে তীব্র যানজটে ভোগান্তির শঙ্কা

বাংলাবাজার খবর:

ঈদুল আযাহকে কেন্দ্র করে দেশের মহাসড়ক ও বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলে তীব্র যানজটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ঈদে ঘরমুখো মানুষ পরিবহন এবং কোরবানির পশুবাহি যানবানের অতিরিক্ত ভিড়ে এ যানজট সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া বন্যার পানিতে বিভিন্ন স্থানের সড়কে পানি থাকাতে যানবাহন চলাচলে ধীরগতি সৃষ্টি হতে পারে। এতে করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি বাড়তে পার।

এজন্য সড়ক পরিবহন বিভাগ ও পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো যানজট নিরসন ও নির্বিঘ্নে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক ও মহাসড়কে ব্যাপক তৎপর থাকবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশের কর্মকর্তারা।এবার কুরবানির ঈদে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে মানুষ ও পশুবাহী গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকবে। সঠিকভাবে সড়কের শৃঙ্খলা রক্ষা করতে না পারলে ভোগান্তির মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে যেতে পারে। এজন্য এখন থেকেই হাইওয়ে পুলিশ, মহানগর ও সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ এবং সড়ক বিভাগের দায়িত্বশীলদের কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ঈদকে সামনে রেখে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমন পথে আসন্ন প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলার প্রস্তুতি শুরু করেছে।

সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ ঢাকা ও গাজীপুর মহানগর পুলিশ এবং ঢাকা জেলা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছে। এই তৎপরতায় তারা মনে করছেন, আসন্ন ঈদুল-আজহায় এবার ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে এবং মহাসড়কে যানজটের ধকল সইতে হবে না।

যোগাযোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকামুখী মানুষের স্রোত না কমালে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমন এবং মহাসড়কে যানজট থাকবে। প্রতি রোজার ঈদে শুধু ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কে গাড়ির চাপ বেশি থাকে। এ সময় ঢাকায় প্রবেশমুখে গাড়ির চাপ কম থাকে। আর কুরবানির ঈদে দুপাশে প্রচণ্ড গাড়ির চাপ থাকে।

প্রবেশমুখে হাজার হাজার পশুবাহী গাড়ি ঢাকায় প্রবেশ করে। আর বহির্গমনমুখে হাজার হাজার গাড়িতে মানুষ ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছেড়ে যায়। এ কারণে কুরবানির ঈদে ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে যানজটের মাত্রা বেশি থাকে এবং মানুষের ভোগান্তির মাত্রা রোজার ঈদের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার প্রধান প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের মধ্যে অন্যতম গাবতলী, টঙ্গী ও যাত্রাবাড়ী। এছাড়া পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বাবুবাজার, বছিলা এবং মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে ঢাকায় যাতায়াত বেড়েছে। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো সবসময়ই কিছু না কিছু কাজ করছে। কখনো সড়ক প্রশস্ততার কাজ করছে, কখনো সড়ক সংস্কার কাজ।

গাবতলী ও টঙ্গী ব্রিজের আধুনিকায়নের কাজ চলমান রয়েছে। টঙ্গী প্রবেশমুখে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) নির্মাণকাজ চলছে। প্রতিবছর দুই ঈদ ও ব্যস্ততম সময়ে মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ মাড়াতে হচ্ছে। আয়তনের তুলনায় ঢাকায় মানুষের বসবাস কয়েকগুণ বেশি হয়ে গেছে।

এ কারণে সড়ক প্রশস্ত করেও তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না। ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের যানজট কমাতে হলে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণের কোনো বিকল্প নেই। সরকার এদিকে দৃষ্টি না দিলে প্রতিবছর যানজটের দুর্ভোগ, সড়কের দুর্ঘটনা মেনে নিয়েই চলতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, বর্তমানে ঢাকা নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকায় প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ হাজার মানুষ ঢাকায় বসবাসের জন্য আসছে। আদর্শ জনঘনত্ব অনুযায়ী রাজধানীতে ৫৫ থেকে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস করার কথা। কিন্তু সবকিছু কেন্দ্রীয়করণ করার কারণে ঢাকায় ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি মানুষ বসবাস করছে।

পেশাজীবীরা জনঘনত্ব কমানোর পরামর্শ দিলেও সরকার সবকিছু কেন্দ্রীয়করণ করায় সেসব পরামর্শ কাজে আসছে না। প্রতিনিয়তই ঢাকামুখী জনস্রোত বাড়ছে। আর ঢাকার বর্তমান পরিবহণের গড় গতি অন্তত ৭ কিলোমিটার। পরিকল্পিত শহরে সড়ক থাকার কথা ২৫ ভাগ।

ঢাকার বর্তমান সড়কের পরিমাণ ৫ দশমিক ১৫ ভাগ। নতুন করে ২ দশমিক ৩ ভাগ সড়ক বাড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। সংশোধিত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) এসব প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এছাড়া নতুন বাস রুট, জলপথ, নদনদী ও খালের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করাসহ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার ঘিরে ১ হাজার ৫২৮ কিলোমিটার এলাকার উন্নয়নে বহুবিধ প্রস্তাব ও সুপারিশ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদের সময় ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখে গাড়ির চাপ বাড়ে। তখন তীব্র যানজট হয়। এটা অনেকদিন ধরে চলে আসছে। দ্রততম সময়ে এর কোনো সমাধান দেখছি না। সবকিছু এভাবে চলতে থাকলে এমন ভোগান্তি মেনে নিয়েই চলতে হবে।

তিনি বলেন, ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখ প্রশস্ত করা হচ্ছে। কিন্তু ঢাকার ভেতরের সড়ক প্রশস্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ঢাকার প্রবেশমুখ প্রশস্ত করেও লাভ হচ্ছে না।

যানজটের টেকসই সমাধান করতে হলে ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে হবে। এ ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে এ সমস্যার সমাধান মিলবে না। তবে ঢাকার নগর পরিবহণ ব্যবস্থাপনায় টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা গেলে যানজট পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) সাবেক মহাপরিচালক ড. এএসএম সালেহ উদ্দিন বলেন, ঢাকার প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের যানজট নিরসনে প্রবেশমুখে দুই লেনের সড়কগুলো চার লেন করে দেওয়া যেতে পারে।

আর ঢাকার বৃত্তাকার সড়কব্যবস্থা গড়ে তুলতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি ঢাকার জনসংখ্যা কমাতে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা পালন না করলে ঢাকা এবং আশপাশের এলাকার যানজট নিরসন হবে না।

এ সম্পর্কে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সামসুল হক বলেন, পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়ে হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মানুষ খুব কম সময়ে ঢাকার প্রবেশমুখে পৌঁছে যাবে।

তাদের সবাইকে পোস্তাগোলা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করাতে হলে দীর্ঘ যানজটের ধকল সামলাতে হবে যাত্রীদের। তখন পদ্মা সেতুর উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। এজন্য কেরানীগঞ্জ এলাকা দিয়ে ঢাকার যে রিং রোড (বৃত্তাকার সড়কপথ) হওয়ার কথা, সেটা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।

তাহলে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ঢাকামুখী মানুষগুলো যার যার সুবিধামতো রিং রোড ব্যবহার করে সেখানে চলে যাবেন। এখনো যেহেতু সরকার সেটা করতে পারেনি, সেকারণে অতিরিক্ত যানজট হবে। যার প্রভাব পড়তে পারে পুরো ঢাকার ওপর।

তিনি বলেন, যে লোক উত্তরা যাবেন, তার পোস্তগোলা ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করার কোনো যুক্তি নেই। তিনি বছিলা বা গাবতলী এলাকা দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে বেড়িবাঁধ সড়ক ব্যবহার করে সে এলাকায় চলে যেতে পারবেন। অন্যান্য এলাকার যাত্রীরাও একইভাবে রিং রোডের সুবিধা গ্রহণ করতে পারবেন।

তাহলে ঢাকার যানজট কমবে এবং অল্পসময়ে সবাই নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যেতে পারবেন। ঢাকাকে ঘিরে সুন্দর সুন্দর অনেক পরিকল্পনা থাকলেও সরকার সেসব বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিচ্ছে না। ঢাকাকে বাঁচাতে হলে জনবান্ধব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

জানতে চাইলে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আসন্ন কুরবানির ঈদে ঢাকায় প্রবেশ ও বহির্গমনমুখের যানজট নিরসনে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সড়কের শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে ঢাকা, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ এলাকার পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে আলোচনা ও সভা করা হচ্ছে। সমস্যা চিহ্নিত করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নেওয়ায় আমরা আশা করছি, আসন্ন কুরবানির ঈদে ঢাকার প্রবেশমুখ ও মহাসড়কে যানজটের ধকল সইতে হবে না মানুষকে।

Spread the love

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

© All rights reserved © 2019
Design & Developed BY আইটি হোস্ট সেবা