বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৯:১৫ অপরাহ্ন

শিরোনাম :
বাংলাবাজার খবর অনলাইন নিউজ পোর্টালের জন্য দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলা ও বিভাগীয় শহরে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। journalist.hadi@gmail.com এবং newsbbazer@gmail.com এই ইমেইল দুই কপি ছবি ও দুইটি নমুনা প্রতিবেদনসহ জীবনবৃত্তান্ত পাঠাতে পারেন। বিভাগীয় শহরে ব্যুরো অফিস দেওয়া হবে।

মূল্য বেঁধে দেওয়া হলো ট্যানারি মালিকদের

বাংলাবাজার প্রতিবেদন :

একদিনের মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জন্য কুরবানির চামড়ার মূল্য বেঁধে দেওয়া হয়নি। দেওয়া হয়েছে লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য। সাধারণত লবণযুক্ত চামড়ার ক্রেতা একমাত্র ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা।

ফলে মূল্য বেঁধে দেওয়ার মধ্যে অস্বচ্ছতার কারণে আবারও চামড়ার বাজারে মূল্য নিয়ে শঙ্কা থেকেই গেল। অনেকটা অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছেন একদিনের মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।

এ বছর লবণযুক্ত ঢাকার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭-৫২ টাকা, গ্রামে ৪০-৪৪ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮-২০ টাকা এবং বকরির চামড়া ১২-১৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি ঈদের দিন থেকে পরবর্র্তী সাত দিন ঢাকা অভিমুখে এবং আন্তঃজেলা কোনো চামড়াবাহী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে উল্লিখিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে সংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তবে শক্ত হাতে হ্যান্ডেল করে রপ্তানি পণ্য নষ্ট করা থেকে এবার রক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, চামড়া ক্রয় নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের জন্য ব্যাংক প্রয়োজনীয় টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছে। দেশে প্রয়োজনীয় লবণ মজুত রয়েছে, লবণের সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রয়েছে। মাঠপর্যায়ে সব ধরনের সহযোগিতার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এবার কুরবানির চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ এবং নির্ধারিত মূল্যে ক্রয়-বিক্রয়ে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না এবং নষ্ট হবে না। তিনি আরও বলেন, চামড়া রপ্তানি বেড়েছে, আরও বাড়বে। সরকার প্রয়াজনের অতিরিক্ত ওয়েট ব্লু চামড়া কেস টু কেস ভিত্তিতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে।

গতবছর প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার মূল্য ছিল ৪০-৪৫ টাকা এবং গ্রামের চামড়া ৩৩-৩৭ টাকা। এছাড়া খাসির চামড়া ১৫-১৭ টাকা এবং বকরি ১২ থেকে ১৪ টাকা। এ বিষয়ে এ বছর কুরবানির চামড়া প্রতি বর্গফুট গরু ৭ টাকা ও খাসিতে ৩ টাকা বেড়েছে। এ মূল্য মেনে নিয়েছেন ট্যানারি মালিকরা। বাণিজ্যমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে এটি নিশ্চিত করেছেন ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম ঢাকার গরুর চামড়া প্রতি বর্গফুটের মূল্য হবে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা এবং গ্রামের গরুর চামড়া ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। তবে মন্ত্রণালয় প্রতি স্কয়ার ফুট যে মূল্য নির্ধারণ করেছে সেটি আমরা মেনে নিয়েছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ সভা পরিচালনা করেন। ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে সভায় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আকতার হোসেন, শিল্প সচিব জাকিয়া সুলতানা, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. মকবুল হোসেন, বাংলাদেশ ফিনিশ লেদার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েমনের প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, হাইড অ্যান্ড স্কিন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান।

সংশ্লিষ্টদের মতে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতিবছরই লবণযুক্ত চামড়ার মূল্য বেঁধে দেয়। এতে একদিনের মৌসুমি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যে মূল্যে চামড়া কেনা হবে সেটি বেঁধে দেওয়া হয়নি। ফলে মূল্য বেঁধে দেওয়ার মধ্যে এক ধরনের অস্বচ্ছতা রয়েছে। এটি কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটবেন আড়ত ও ট্যানারি মালিকরা। যা বিগত কয়েক বছর ধরে ঘটে আসছে।

এদিকে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। যাতে চামড়া নষ্ট হওয়া ঠেকানো এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে জেলা-উপজেলা প্রশাসন ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তদারকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই বৈঠকে সব ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এ বছর কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৯৭ লাখ। এক কোটি ২১ লাখ পশু কুরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া লবণের কোনো ঘাটতি নেই। কুরবানির ঈদে ৮২ হাজার টন লবণ প্রয়োজন হয়। এরই মধ্যে কুরবানির পশুর জন্য প্রয়োজনীয় লবণ ব্যবসায়ীরা মজুত করেছেন। শিল্প মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে আরও দেড় লাখ টন লবণ আমদানি করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে মোটামুটি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৬৪.৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১.৮২ শতাংশ ছাগলের, ২.২৫ শতাংশ মহিষের এবং ১.২ শতাংশ ভেড়ার চামড়া।

এদিকে ঈদুল আজহায় চামড়ার ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় আছেন সংশ্লিষ্টরা। এর একটি কারণ হচ্ছে, চামড়ার বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে। বেড়েছে লবণের দামও। পাশাপাশি, চামড়া প্রক্রিয়াজাতে ব্যবহৃত রাসায়নিকের দাম বেড়েছে। বিশেষ করে ৬০ কেজি বস্তার যে লবণের দাম ৩ মাস আগেও ছিল ৫৫০ টাকা এখন তা ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কেমিক্যালের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। পরিবহণ খরচ গত ৬-৭ মাসে ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

Spread the love

এই পোস্টটি আপনার সামাজিক মিডিয়াতে ভাগ করুন

© All rights reserved © 2019
Design & Developed BY আইটি হোস্ট সেবা